মানুষ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা। Helped school
মানুষ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা
আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে মানুষ কবিতার প্রত্যেকটি ছন্দের ব্যাখ্যা করব যাতে তোমাদের বুঝতে সুবিধা হয়। আমাদের ওয়েবসাইটে নবম - দশম শ্রেণীর সকল কবিতার ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। তোমরা চাইলে home গিয়ে সার্চ করে দেখতে পারো।
আরও পড়ুন ঃ
বঙ্গবাণী কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা
মানুষ কবিতার মূলভাব
‘মানুষ’ কবিতায় কবি সাম্যবাদের দৃষ্টিতে পৃথিবীর সব মানুষ এক ও অভিন্ন জাতি এই সত্যটি তুলে ধরেছেন। কবি এখানে ধর্ম, বর্ণ, গােত্র, জাতি প্রভৃতির বাইরে মানুষের আসল পরিচয় সম্পর্কে আলােকপাত করেছেন।
মানবসেবা মহান কাজ, ক্ষুধার্তকে অনুদান সব ধর্মে স্বীকৃত। কিন্তু ‘মানুষ’ কবিতায় ক্ষুধার্ত ব্যক্তিটি মন্দিরের পূজারি এবং মসজিদের মােল্লা দ্বারা নিগৃহীত হয়েছে।
সাত দিন ভুখা ফাকা থাকার কথা বলেও সে খাবার প্রার্থনা করে তাদের কাছে বঞ্চিত হয়েছে। অথচ আশি বছর ধরে কোনাে প্রার্থনা ছাড়াই প্রভুর দেওয়া খাবার খেয়ে বেঁচে আছে। মানুষের মর্যাদা, সম্মান, উচ্চাসন সবকিছু স্রষ্টার কাছে সমানভাবে বিচায় ।
অথচ মানুষ তাকে ধর্মের নামে, জাতের নামে ভিন্ন ভিন্ন করে দেখে। মসজিদে-মন্দিরে মােল্লা-পুরুতের আধিপত্য চলে। ভজনালয়ে, খােদার ঘরে কপাট লাগিয়ে যারা তালা দেয়, তারা মানবতার শত্রু, সাম্যের শত্রু।
তাদের প্রতিহত করতে সাধারণ মানুষ হাতুড়ি, শাবল নিয়ে একদিন এগিয়ে আসবে। আর তাতে জগতে মানবতার, সাম্যের, শক্তির, জয়ের নিশান উড়বে। কাজেই মানুষকে ঘৃণা করে শুধু ধর্মগ্রন্থ পাঠ, ধর্মালয়ের সেবা অযৌক্তিক, অধর্মের নামান্তর।
মানুষ কবিতার ব্যাখ্যা
<\> গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
- ‘মানুষ’ কবিতায় সাম্যবাদের দৃষ্টিতে পৃথিবীর সব মানুষ এক ও অভিন্ন জাতি এই সত্যটি প্রতিফলিত হয়েছে। মানুষই শ্রেষ্ঠ পৃথিবীতে, মানুষ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আর কিছু নেই। দেশ-কাল, ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গােত্র এ সবকিছুই মানুষের তুলনায় অতি ক্ষুদ্র। পৃথিবীজুড়ে যত মানুষ আছে তারা এক জাতি, তা হলাে মানুষ জাতি।
<\> 'পূজারী, দুয়ার খােলাে,
ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলাে!”
স্বপন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়,
দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হয়ে যাবে নিশ্চয়।
- পূজারি স্বপ্নে দেখল তাকে কে যেন বলছে- তার দুয়ারে ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়িয়ে আছেন। সে যেন দুত সেই দুয়ার খুলে তাকে অভ্যর্থনা জানায়, তার পূজা করে। তাই দেখে পূজারি ভজনালয় খুলতে গেল। ভাবতে লাগল, দেবতার আশীর্বাদে আজ সে নিশ্চয় রাজা হয়ে যাবে।
<\> জীর্ণ-বস্ত্ৰ শীৰ্ণ-গাত্র, ক্ষুধায় কষ্ঠ ক্ষীণ
ডাকিল পান্থ, দ্বার খােলাে বাবা, খাইনি তাে সাত দিন।
সহসা বন্ধ হলাে মন্দির, ভুখারি ফিরিয়া চলে,
তিমিররাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে।
ভুখারি ফুকারি’ কয়,
‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তােমার নয়!
- ছেড়া-ময়লা জামা পরা একজন ক্ষুধার্ত ভিক্ষুক সেই ভজনালয়ের। সামনে গিয়ে কাতর স্বরে বলল- বাবা দয়া করে দরজা খুলুন, ‘আমি সাত দিন ধরে উপােস, আমাকে কিছু খেতে দিন। তখন হঠাৎ সেই দরজা বন্ধ হয়ে গেল। ক্ষুধার্ত ভিখারি ফিরে চলল। অন্ধকার রাতে সে পথ চলে। ক্ষুধায় তার পেট জ্বলতে থাকে । ভিখারি চিৎকার করে বলে- ঐ মন্দির পূজারির, দেবতার নয়। দেবতা সেখানে অসহায়। নইলে তাকে কেন ফিরিয়ে দেবে।
<\> মসজিদে কাল শিরনি আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মােল্লা সাহেব হেসে তাই কুটি কুটি,
এমন সময় এলাে মুসাফির গায়ে আজারির চিন
বলে, ‘বাবা, আমি ভুখা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন।
- মসজিদে আগের দিন শিরনি ছিল, সেখানে অনেক গােশ্বত-রুটি বেঁচে গেছে। তা দেখে মােল্লা সাহেব খুব খুশি। এমন সময় ঐ ক্ষুধার্ত মুসাফির তাকে বলল- বাবা, আমি খুব ক্ষুধার্ত, আজ নিয়ে সাত দিন হয় কিছু খাইনি। আমাকে কিছু খেতে দিন।
<\> তেরিয়া হইয়া হাঁকিল মােল্লা- ভ্যালা হলাে দেখি লেঠা,
ভুখা আছ মর গাে-ভাগাড়ে গিয়ে নমাজ পড়িস বেটা?
ভুখারি কহিল, ‘না বাবা!’ মােল্লা হাঁকিল– তা হলে শালা
সােজা পথ দেখা’ গােস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা।
- ঐ ক্ষুধার্ত মুসাফিরের কথা শুনে মােল্লা রেগে গেল। রেগে গিয়ে সে তাকে ধমক দিয়ে বলল- ক্ষুধার্ত তাে গাে-ভাগাড়ে গিয়ে মর, এখানে এসেছিস কেন। আরও জানতে চাইল ঐ মুসাফির নামাজ পড়ে কিনা। ভিখারি না সূচক উত্তর দেওয়ায় মােল্লা আরও ক্ষুব্ধ হলাে। তারপর তাকে ‘শালা’ বলে গাল দিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়ে সব গােত-রুটি নিয়ে সে মসজিদে তালা দিল ।
<\> ভুখারি ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে‘আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তােমায় কভু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা বলে বন্ধ করনি প্রভু।
তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি।
মােল্লা পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি!
- ক্ষুধার্ত ভিখারি নিরুপায় হয়ে ফিরে যায়। যেতে যেতে ভাবে, জীবনের আশি বছর সময় সে পার করেছে, কখনাে তার স্রষ্টাকে ডাকেনি। তাই বলে তাে তিনি তার আহার বন্ধ করে দেননি। তাহলে ঐ যে মসজিদ-মন্দিরে প্রার্থনা করা হয় সেখানে কি তিনি নেই? তাহলে ঐ মসজিদ-মন্দির কি শুধু মােল্লা-পুরুতের? তারা ঐ মসজিদ-মন্দিরে সব দরজা বন্ধ করে দিয়েছে বলে কি মানুষের প্রভু সেখানে ঢুকতে পারেন না?
<\> কোথা চেঙ্গিস, গজনি মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?
ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া দ্বার।
খােদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা?
সব দ্বার এর খােলা রবে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা!
- মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার আরাধনা করার জন্য যে ঘর তৈরি হয়েছে, সে ঘর বন্ধ থাকবে না, জোর করে হলেও তার দ্বার খুলে দিতে হবে। সর্বজনীন উপাসনালয়গুলাে মােল্লা-পুরােহিত কুক্ষিগত করেছে। তারা মসজিদ-মন্দিরের দরজায় তালা লাগিয়েছে। কবি সেই তালা ভেঙে মসজিদ-মন্দিরের সব দরজা খুলে দিতে বলেছেন। তিনি বীর-সাহসীদের সর্বশক্তি। নিয়ে এগিয়ে যেতে বলেছেন। এ প্রসঙ্গে অনুপ্রেরণা হিসেবে সতেরােবার ভারতবর্ষ আক্রমণকারী গজনির সুলতান মাহমুদ, বীর চেঙ্গিস খানকে তিনি স্মরণ করেছেন। যারা পবিত্র উপাসনালয়ের দরজা বন্ধ করে, তাদের ধ্বংসের জন্য কবি দেবালয় ধ্বংসের হােতা কালাপাহাড়কে স্মরণ করেছেন। কবির প্রত্যাশায় এখানে মানুষের জয়গান সূচিত হয়েছে।
<\> হায় রে ভজনালয়,
তােমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়!
- কবির মতে যারা ভজনালয়ে বসে স্বার্থ চিন্তা করে তারা ভণ্ড। অনাহারীকে খাবার না দিয়ে তাড়িয়ে দেয় তারা স্বার্থপর, ভণ্ড। প্রার্থনা করে, অথচ যারা মসজিদের মিনারে উঠে আজান দেয়, এসব ভন্ডের দল যে জয়গান করে তা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের জয়গান। তাতে সত্য নেই, সুষ্টা নেই। কবি এ ধর্মব্যবসায়ী ভণ্ডদের ঘৃণা করেন। এ কারণেই ধর্মের চেয়ে তার কাছে মানুষ বড়।
Postar um comentário