বর্ষাকাল রচনা। Helped school.
বর্ষাকাল রচনা
আরও পড়ুন ঃ
দেশপ্রেম সম্পুর্ণ রচনা।
প্রবন্ধ সংকেত ঃ
[ ১. ভূমিকা ॥
২. বর্ষার বৈশিষ্ট্য ॥
৩. সময় ॥
৪. উপকারিতা ॥
৫. অপকারিতা ॥
৬. উপসংহার ॥ ]
বর্ষাকাল সম্পুর্ণ রচনা
ভূমিকা :
গ্রীষ্মের দারুণ উত্তাপে সারা দেশে যখন জ্বালা ধরে যায়, তখন বর্ষা আসে আশীর্বাদের মতাে আশার বাণী নিয়ে । বাদলের ধারা শান্তির স্পর্শ বুলিয়ে দেয়। কদম গাছ ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় ও কেয়ার বন থেকে ফুলের মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসে । ভিজে মাটি ও আম, কাঁঠাল, জাম, আনারসের গন্ধে কেমন যেন একটা নেশা ধরে যায় এবং গ্রীষ্মের উত্তাপের কথা আর মনে থাকে না। বাংলাদেশকে আমরা একটা নতুন রূপে দেখতে পাই ।
বর্ষার বৈশিষ্ট্য :
বর্ষার আকাশ ঘন মেঘে আচ্ছন্ন থাকে। কালাে মেঘ হাওয়ার ঘােড়ায় সওয়ার হয়ে উত্তর দিকে ছুটতে থাকে। আকাশে তখন মহাপ্রলয় শুরু হয়ে যায় । বজ্রের হুঙ্কারে ও বিদ্যুতের চমকানিতে বুক দুরদুর করে কাঁপতে থাকে। তখন। গাছপালা বৃষ্টির পানিতে ভিজে কেমন যেন নির্জীব হয়ে পড়ে। রাস্তা ঘাটের উপর বহু স্থানে পানি দাঁড়িয়ে যায় । নদীনালা, খালবিল পানিতে থৈ থৈ করতে থাকে ! বৃষ্টিপাতের একটানা ঝরঝর শব্দ ছাড়া জন মানবের কোনাে সাড়া পাওয়া যায় না।
সময় :
আষাঢ়-শ্রাবণ দু’মাসকে বর্ষাকাল বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে বর্ষাকাল এ দুটো মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বস্তুত বর্ষা এখানে শুরু হয়ে যায় আষাঢ়ের আগে বৈশাখের মাঝামাঝি হতে আর শেষ হয় ভাদ্রমাসেরও পরে কার্তিক মাসের মাঝামাঝিতে গিয়ে। বর্ষার পানি পেয়ে শুষ্ক পৃথিবী শীতল, স্নিগ্ধ ও সজীব হয় । গাছপালাও সতেজ হয়ে ওঠে। জীবজন্তু ও মানুষ হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।
উপকারিতা :
বাংলাদেশের বর্ষাঋতুর দানের শেষ নেই । বাংলাদেশের শ্যামল শােভা ও মনােরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মূলত বর্ষাকালের বৃষ্টিপাতের দান ছাড়া আর কিছুই নয় । বর্ষাকালে বহু ফল, তরিতরকারি ও মাছ পাওয়া যায় । বর্ষার পানি পেয়ে মরে যাওয়া নদীগুলাে আবার বেঁচে ওঠে । সাথে সাথে শুকিয়ে যাওয়া খালগুলােও পানিতে ভরে যায়। অনেক সময় নদী ও খাল। পানিকে তাদের বুকে ধরে রাখতে পারে না । কূল ছাপিয়ে মাঠ পানিতে ভেসে যায় । চৈত্রে যে মাঠ চৌচির হয়ে গিয়েছিল তার বুকের ওপর দিয়ে নৌকা, ডিঙি, ভেলা এদিক-ওদিক আনাগােনা করে । গাঁয়ের বধূরা এ সময় বাপ-মায়ের বাড়িতে বেড়াতে যায় ও সেখানে আনন্দ উৎসব মেতে ওঠে ।
অপকারিতা :
বর্ষাকালে অবিরাম বৃষ্টিপাত হয়। দিনের পর দিন একটানা বর্ষণ হতে থাকে। মেঘে মেঘে আকাশ ছেয়ে যায় ও সূর্যকে আড়াল করে দেয় । মাথায় ছাতা না ধরে ঘরের বাহিরে বের হওয়া যায় না। পথঘাট কাদায় কাদায় চলাচলের অযােগ্য হয়ে যায়, কখনও পানিতে তলিয়ে যায়। লােকজন ঘরে আবদ্ধ হয়ে থাকতে বাধ্য হয়। নৌকা ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার কোনাে উপায় থাকে না। হাট বাজার নিয়মিত বসে না । জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায় ও গাঁয়ের ঘরে ঘরে অভাব। অনটন আসন পেতে বসে । অধিক বৃষ্টিপাত হলে বন্যা হয়। বন্যায় বাড়ি ঘর, রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। বর্ষাকালে কৃষকেরা পাট কেটে খাল ও ডােবার মাঝে ভিজিয়ে রাখে । পাট পচে একদিকে যেমন বাতাস দুর্গন্ধে ভরে যায়, অপর । দিকে তেমনি মশার উৎপাত খুবই বেড়ে যায়। ফলে সাধারণত মশার কামড়ে মানুষ ঘুমুতে পারে না। তাই গ্রামের প্রতি ঘরে । তখন ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব হয় ।
উপসংহার :
বাংলাদেশের ছয়টি ঋতুর মধ্যে বর্ষা ঋতুকেই বিশেষভাবে উপলব্ধি করা যায়। এ ঋতু অলক্ষে ও নিভৃতে এসে। হাজির হয় না । ঢাক-ঢােল বাজিয়ে সাজ সাজ রব করে এসে হাজির হয় । ঘন কালাে মেঘ আকাশে ভেসে বেড়ায়। আকাশ নিবিড় অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায় ।
এ দৃশ্য দেখেই যেন কবি একদিন গেয়ে উঠেছিলেন :
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর
আউশের খেত জলে ভরভর।
কালিমাখা মেঘে ওপরে আঁধার
ঘনায়েছে দেখ চাহিরে,
ওগাে আজ তােরা যাসনে ঘরের বাহিরে ।
Postar um comentário