-->

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা. Helped school.

 আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা 


আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা. Helped school

আরও পড়ুন ঃ 

অধ্যাবসায় রচনা - ২০২২. 


প্রবন্ধ-সংকেত ঃ


 ভূমিকা ॥ পটভূমি ॥ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি ॥ মাতৃভাষা দিবসের আনন্দ উৎসব ॥ ভাষা আন্দেলনের সূত্রপাত্র॥  একুশের স্মৃতি ॥ রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি ॥  আন্তজার্তিকভাবে স্বাকৃতি ॥ স্বাধীকার চেতনা ॥ শহিদ দিবসের তাৎপর্য ॥ উপসংহার।।


আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ঃ-


ভূমিকা :

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাে একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি? একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জানি, জীবনে এক গৌরবময় ও ঐতিহ্যবাহী দিন । বাঙালির জাতীয় জীবনের সকল চেতনার উৎস হচ্ছে এ দিনটি । বাংলা ভাষা রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার ঐতিহাসিক দিন এটি । ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মযাদা রক্ষার জানে জীবন দিয়ে বাঙালি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।


বাঙালির রক্তঝরা এ দিনটিকে সারা বিশ্বে স্মরণীয় করে রাখতে ইউনেস্কো। একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, সম্মান জানিয়েছে ভাষা শহিদদের প্রতি। তাই ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরবদীপ্ত ঐতিহাসিক দিন। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আর শুধু আমাদের মাতৃভাষা দিবস নয়; প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ।


পটভূমি :

একসময় পুরাে ভারতবর্ষ শাসন করত ব্রিটিশ তথা ইংরেজরা। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ছিল দুটি অংশে। একদিকে পূর্ব পাকিস্তান অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তান। স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা কী হবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং উর্দুভাষী বুদ্ধিজীবীরা বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হবে উর্দু। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান (আজকের বাংলাদেশ) থেকে দাবি ওঠে, বাংলাকেও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে হবে । কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার হীন চক্রান্তে লিপ্ত হয় । ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মােহাম্মদ আলী ঘােষণা করেন উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ।


আন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি :

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাঙালি জাতির জন্য এ এক বিরাট গৌরব। একদিকে সারা বিশ্বের মানুষ জানতে পারবে বাংলাদেশ নামে একটি দেশের কথা, বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার কথা, অন্যদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশের ভাষাগুলাে মর্যাদা লাভের পথ খুঁজে পাবে! বলা যায়, ভাষার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ এক বিরাট ভূমিকা পালন করবে।


মাতৃভাষা দিবসের আনন্দ উৎসব :

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়ায় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাতৃভাষা দিবস উৎসবের আয়ােজন করে ১৯৯৯ সালের ৭ ডিসেম্বর। উৎসবটি পালিত হয় ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে। একুশ আমাদের অহংকার’, ‘একুশ পৃথিবীর অলঙ্কার’, অমর একুশ অজয় হয়েছে’–এরকম অজস্র কথা, কবিতা, গদ্য, নৃত্যছন্দে জমজমাট আনন্দ উৎসবের মধ্যে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উপলক্ষে দিনভর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আনন্দ, শােভাযাত্রা, আলােচনা, নৃত্য, সংগীত, আবৃত্তি ইত্যাদি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়ােজন করা হয়। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পালিত হয় এ উৎসব।


ভাষা আন্দেলনের সূত্রপাত্র :

মােহাম্মদ আলী জিন্নাহর ১৯৪৮ সালে ঘােষণার পর থেকেই বাংলা ভাষার আন্দোলন জোরদার। হতে থাকে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে শুরু হলাে তীব্র গণ আন্দোলন। প্রাথমিকভাবে ছাত্ররা এ আন্দোলন চালিয়ে নিলেও পরবর্তী সময়ে গােটা দেশ্বাসী ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা ঘােষণা করে। দেশবাসীর জোরালাে সমর্থনে ছাত্রদের মনােবল আরাে বেড়ে যায়, তারা দ্বিগুণ উৎসাহে সামনের দিকে এগােতে থাকে। রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই' স্লোগানে ফেটে পড়ল বাংলাদেশের কৃষক-মজুর-ছাত্র-জনতা।


একুশের স্মৃতি :

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে প্রাদেশিত পরিষদের অধিবেশনকে সামনে রেখে সমগ্র দেশে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন জোরদার করা হয়। পাকিস্তানি শাসক ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের মিটিং, মিছিল ও সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘােষণা করে। কিন্তু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানে প্রত্যয়ী ছাত্রসমাজ ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করে।


মিছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে সরকারের নির্দেশে পুলিশ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে সালাম, বরকত, রফিক ও জাব্বারসহ নাম না জানা অনেকে নিহত হয় । এ হত্যাযজ্ঞ ও দমননীতির ফলে আন্দোলন আরাে বেগবান হয়। ৫২-র ভাষা আন্দোলন এ দেশের কবিসমাজকে করেছে তুমুল আলােড়িত । বেঅনেক কবি অসংখ্য কবিতার মাধ্যমে এই ভাষা আন্দোলনকে করেছেন বেগবান। ৫২-র ভাষা-আন্দোলনের প্রভাবে কবি শামসুর রাহমান রচনা করেছেন, বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’ নামক বিখ্যাত। কবিতাটি _


‘তােমাকে উপড়ে নিলে, বলাে তবে কী থাকে আমার?

 উনিশ শাে’ বাহান্নোর দারুণ রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি

বুকে নিয়ে আছাে সগৌরবে মহীয়সী।'


রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি :

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের খবর সারা দেশে | বুকে নিয়ে আছাে সগৌরবে মহীয়সী।' । পাছে যায় এবং দেশবাসী প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। অতঃপর পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। হাত দিতে বাধ্য হয়। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।


আন্তজার্তিকভাবে স্বাকৃতি :

একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আর শুধু আমাদের মাতৃভাষা দিবস নয়। প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) তার সাধারণ পরিষদের ৩০তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশসহ ২৮টি দেশের সমর্থন নিয়ে সবসম্মতভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি' -কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকতি দেয়। ইউনেস্কোর প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্যে বাংলাদেশের অনন্য ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং ১৯৫২ সালের এই দিনের শহিদদের স্মৃতিকে সারা বিশ্বে স্মরণীয় করে রাখতে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলাে। প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোর ১৮৮টি সদস্য দেশ এবং ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হবে ।” ইউনেস্কোর এ ঘােষণার মধ্য দিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলা ভাষা সম্মানিত হলাে এবং একবিংশ শতাব্দীর তথা ২০০১ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বব্যাপী প্রথম পালিত হলাে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।


স্বাধীকার চেতনা :

ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির মাঝে যে চেতনায় উন্মেষ হয়, তার চরম বিস্ফোরণ ঘটে ঊনসত্তর থেকে একাত্তরে । একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য শহিদ দিবস পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নি; তা বাঙালির জাতীয় জীবনের সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের সমস্ত আন্দোলনের মূল চেতনা একুশে ফেব্রুয়ারি । একুশের আলােয়। আলােকিত বাঙালি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে ।


শহিদ দিবসের তাৎপর্য :

আমাদের জাতীয় জীবনে এ দিনটির তাৎপর্য অপরিসীম । বুকের তাজা রক্ত ঝরিয়ে অর্জিত হয়েছে। বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার । এ দিবসে প্রত্যেক ভাষার মানুষ নিজের মাতৃভাষাতে যেমন ভালোবাসবে তেমনি অন্য জাতির মাতৃভাষাকেও মর্যাদা দেবে । এভাবে একুশকে চেতনায় ধারণ করে মাতৃভাষাকে ভালোবাসার প্রেরণা পাবে মানুষ।


উপসংহার :

বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে গৃহীত হওয়ার ব্যাপারটি আমাদের তথা বাংলাদেশের জন্যে মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের প্রেরণা এবং অনুভব করেছিল ঐক্যবদ্ধ। আন্দোলনের আবশ্যকতা । এ দিনটি আমাদের কাছে গৌরব ও মর্যাদার এক মহান দিন ।