অধ্যবসায় রচনা। সম্পুর্ন অধ্যবসায় রচনা - Helped school.
অধ্যবসায় রচনা
আরও পড়ুন ঃ
ধব্বনি কাকে বলে ? ধব্বনি কত প্রকার ও কি কি
“পারিব না এ কথাটি বলিও না আর
কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার,
পাচ জনে পারে যাহা,
তুমিও পারিবে তাহা
পার কি না পার কর যতন আবার
একবারে না পারিলে দেখ শতবার।” – কালিপ্রসন্ন ঘােষ।
ভূমিকা :
মানুষ আজ পর্যন্ত যতগুলাে অভ্যাস আয়ত্ত করেছে তার মধ্যে, অধ্যবসায়ই শ্রেষ্ঠ। এর বলে মানুষ অসাধ্যকে সাধন করতে পারে, অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। জীবনের সর্বক্ষেত্রেই অধ্যবসায়ের প্রয়ােজন। অধ্যবসায় ছাড়া কঠিন কাজে সফলতা লাভ করা যায় না। শত বাধাবিঘ্নের সাথে লড়াই করে যে জয়ী হতে পারে, সে-ই জীবনে উন্নতি লাভ করতে পারে। সুতরাং মানুষের উন্নতির জন্য সবচেয়ে বেশি নির্ভরযােগ্য সােপান হচ্ছে অধ্যবসায়।
অধ্যবসায় কী :
কোনাে কাজে সফলতা লাভের জন্য বারবার চেষ্টা করার নাম অধ্যবসায়। অধ্যবসায় একটি শ্রেষ্ঠ গুণ | প্রকৃতপক্ষে অধ্যবসায় বলতে মানব চরিত্রের কতকগুলাে বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ বােঝায়। উদ্যোগ, পরিশ্রম, আন্তরিকতা, মনােবল প্রভৃতি গুণ একত্রিত হয়েই অধ্যবসায়ের। পরিপূর্ণ রূপ সৃষ্টি করে। মনের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কাজে আত্মনিয়ােগ করার সঙ্গে সঙ্গে চরিত্রের অন্যান্য গুণ যখন কাজে লাগানাে হয় তখনই।
অধ্যবসায়ের পরিচয় পাওয়া যায়। অধ্যবসায়ের বলেই মানুষ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। জগতের সর্বত্রই অধ্যবসায়ের জয় ঘােষিত হচ্ছে । সকল প্রাণীই তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বারবার প্রচেষ্টা চালায়। জীবনের সফলতার জন্য অধ্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য কর্মপ্রবাহে ফুটিয়ে তুলতে হয় এবং তাতে জীবনের পরিপূর্ণতা লাভের পথ সহজ হয়। মানুষের আজকের এ প্রতিষ্ঠার মূলে রয়েছে অধ্যবসায়।
অধ্যবসায়ের প্রয়ােজনীয়তা :
অধ্যবসায়ের প্রয়ােজনীয়তা জীবনের সর্বক্ষেত্রে অনুভব করা যায়। মানবজীবনে প্রত্যেক কাজেই বাধাবিপত্তি দেখা দিতে পারে। কিন্তু সে বাধাকে ভয় করলে চলবে না। সেসব বাধা অতিক্রম করে যথার্থ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করাই জীবনের প্রধান লক্ষ্য। জীবনের এই চলার পথ সহজ করার জন্য প্রয়ােজন অধ্যবসায়ের। জীবনের পথে যেসব বাধা থাকে সেসব জয় করতে না পারলে মানবজীবনের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ সম্ভব নয়। হদয়ের প্রবল শক্তি এবং সাহস দিয়ে সকল বাধা জয় করতে হয়।
অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সেই জয় এবং সফলতা আসে। মানবসন্তান হিসেবে ভূমিষ্ঠ হলেই তাকে প্রকৃত মানুষ বলা যায় না। তাকে মনুষ্যত্ব অর্থাৎ, মানবিক গুণাবলি অর্জনের ভেতর দিয়ে মানুষ হতে হয়। জীবনের পরিবেশের প্রবল প্রতিকুলতার মধ্যে কেবল অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সাফল্যের সােনালি শিখরে পৌছানাে যায়। মনীষীরা সাধনা করে জীবনে সফলকাম হয়েছেন। তাদের অধ্যবসায়ের গুণেই আজ মানুষ উন্নতির শীর্ষে আরােহণ করেছে।
বর্তমান বিশ্বে মানবজীবন সুখকর করার। আয়ােজনের পিছনে আছে অনন্ত অধ্যবসায়। জীবনের সামনের বাধা অতিক্রম করা মানুষের পক্ষে একদিনে সম্ভব হয় নি। এর জন্য বহু মানুষকে বহুদিন ধরে অধ্যবসায়ী হতে হয়েছে। পূর্বপুরুষের অধ্যবসায় বিশ্বের মানুষের সভ্যতার পথ সহজ করেছে, জীবনে এনেছে সুখের সমারােহ মনে রাখতে হবে, রাতের আঁধার কেটে যেমন দেখা দেয় দিনের আলােক রেখা, তেমনি বার বার চেষ্টার পর মানুষের ভাগ্যাকাশে উদিত হয় বা জীবনের প্রথম ব্যর্থতাকে মনে করতে হবে সাফল্যের প্রথম সােপান। তাই ইংরেজিতে বলা হয়েছে, "Failure is the pillar of success." জগতে যারা বড় হয়েছেন, অমর হয়েছেন, তারা সবাই অধ্যবসায়ী ছিলেন। চিরায়ত শিল্প, সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার— সবই মানুষের অধ্যবসায়ের ফল। কাজেই অধ্যবসায়ের প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম।
অধ্যবসায় ও প্রতিভা :
কেউ কেউ মনে করেন, অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী না হলে বড় কাজ সাধন করা যায় না। কিন্তু অধ্যবসায় ও পিরশ্রম ছাড়া শুধু প্রতিভায় কাজ হয় না। মহাবিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন বলেছেন, “আমার আবিষ্কারের কারণ প্রতিভা নয়, বহু বছরের চিন্তাশালতা ও পরিশ্রমের ফলে দুরুহ তত্ত্বগুলাের রহস্য আমি ধরতে পেরেছি। অস্পষ্টতা হতে ধীরে ধীরে আমি স্পষ্টতার দিকে উপস্থিত হয়েছি।” দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছেন, “প্রতিভা বলে কিছুই নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও, তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।” ডালটন বলেছেন, “লােকে আমাকে প্রতিভাবান বলে, কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া আর কিছুই জানি না।অর্থাৎ প্রতিভাকে সফল করতে হলে অধ্যবসায় প্রয়ােজন।
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় :
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের একান্ত প্রয়ােজন। আলস্যপরায়ণ ও শ্রমবিমুখ ব্যক্তি কখনাে বিদ্যালাভ করতে পারে না। অল্প। মেধাশক্তিসম্পন্ন ছাত্রও অধ্যবসায়ী হলে সফলতা লাভ করতে পারে। কোনাে ছাত্র একবার অকৃতকার্য হলে হয়ত পরিবার থেকে তাকে নানা ভৎসনা শুনতে হয়, তাই বলে তাকে উদ্যম বা ধৈর্যহারা হলে চলবে না। আগের চেয়ে অধিক মনােবল নিয়ে তাকে চেষ্টা করতে হবে। তবে সাফল্য আসবেই।
এ সত্য উপলব্ধি করেই কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন—
“কেন পান্থ ক্ষান্ত হও, হেরি দীর্ঘ পথ
উদ্যম বিহনে কার পুরে মনােরথ?”
ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব :
যেকোনাে ব্যক্তির জীবনে অধ্যবসায় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সকল মানুষের শক্তি বা ক্ষমতা এক রকম নয়, কন্তু প্রত্যেককে উন্নত জীবনের সন্ধান পেতে হয়। সেখানে যদি অধ্যবসায়ের যথার্থ প্রয়ােগ করা যায় তবে শক্তির স্বল্পতা সাফল্যের পথে কোনাে। বধা হয়ে থাকতে পারে না। কাজের আগ্রহ, বুদ্ধিমত্তার প্রয়ােগ, সুদৃঢ় সংকল্প এসব যদি ঠিক থাকে তবে কোনাে ব্যক্তিই কোনাে কাজে ব্যর্থ হয় না। মানুষকে তার প্রয়ােজনীয় উপকরণ নিজের যােগ্যতা দিয়ে সংগ্রহ করে নিতে হয়। আর তাই ব্যক্তিজীবনে নিরলস অধ্যবসায় প্রয়ােজন।
জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব :
জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব কম নয়। কোনাে জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সে জাতির সকল নাগরিককে অধ্যবসায়ী হতে হবে। সবাই একনিষ্ঠভাবে জাতীয় স্বার্থ সাধনের জন্য সর্বশক্তি নিয়ে আত্মনিয়ােগ করলেই মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে। প্রতিষ্ঠা অর্জন করা সম্ভব। অবশ্য ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের ফল জাতীয় জীবনের বৃহত্তম কল্যাণে আসে। বিশ্বের জ্ঞানী, মনীষী, আবিঙ্গাবক।
ধর্মপ্রবর্তক, রাষ্ট্রনায়ক, কবি, সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক সকলেই অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছেন । একেবারেই ক্ষুদ্র অবস্থা থেকে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জনের পেছনে অধ্যবসায় কেমন কাজ করেছে তার নিদর্শন বিশ্বের বহু মনীষীর জীবনে বিদ্যমান । বাকি। জাতি এবং বিশ্বের কল্যাণ সাধনের জন্য অধ্যবসায় খুবই প্রয়ােজন।
অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত :
জীবন সংগ্রামে সাফল্যের মূলমন্ত্র অধ্যবসায়। ইতিহাসের পাতা উল্টালে এ ধরনের বহু দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। ইটল্যাণ্ডের রাজা রবা এস অধ্যবসায়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । তিনি ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ডের সঙ্গে ছয়বার যুদ্ধে পরাজিত হয়েও অধ্যবসায় ত্যাগ করেন নি। পর পর ছয়বার পরাজয়ের পর তিনি যখন একটা নির্জন দুর্গে চিন্তায় মগ্ন ছিলেন, তখন একদিন দেখলেন একটা মাকড়সা সাতবার চেষ্টার পর দুটি কড়িকাঠে সূতা জড়িয়ে জাল তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। এই দৃশ্য দেখে তার অন্তর অদম্য উৎসাহে ভরে গেল। তিনি পুনরায় সপ্তমবারের মতাে যুদ্ধ করে শত্রু সৈন্যদের। পরাজিত করে নিজের দেশ উদ্ধার করলেন।
ইতিহাসে চিরস্মরণীয় অর্ধপৃথিবীর অধীশ্বর নেপােলিয়ন তার কর্মের ভেতর দিয়ে রেখে গেছেন অধ্যবসায়ের। অপূর্ব নিদর্শন। কোনাে কাজকেই তিনি অসম্ভব বলে মনে করতেন না। তাই তিনি এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও একমাত্র অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ফরাসি জাতির ভাগ্যবিধাতার পদে অধিষ্ঠিত হতে সমর্থ হয়েছিলেন । বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু বহুকাল অধ্যবসায় চালিয়ে উদ্ভিদের চেতনাশক্তি ও স্পন্দন সম্পর্কে তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। এমনিভাবে বহু মনীষী তাঁদের অধ্যবসায় দ্বারা অবদান রেখে পৃথিবীতে অমর হয়ে আছেন।
উপসংহার :
মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অধ্যবসায় একান্ত প্রয়ােজন। যে অধ্যবসায়ী নয়, সে কখনাে কোনাে কাজে সফল হতে পারে না। বন্যপ্রাণীর মতাে খেয়ে পরে সে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় এবং মৃত্যুর সাথে সাথে তার নাম আর কেউ স্মরণ করে না। একমাত্র অধ্যবসায়ী লােকই তার কর্মের মধ্যদিয়ে পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকেন।
Postar um comentário