-->

ঝর্ণার গান কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা। Helped school.

 ঝর্ণার গান কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা

ঝর্ণার গান কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা

ঝর্ণার গান কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রত্যেক টা চরণ আলাদা আলাদা ভাবে তুলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আসা করি সকল ছাত্র - ছাত্রী দের এর ফলে সুবিধা হবে।


আরও পড়ুন ঃ 

বই পড়ার আনন্দ অনুচ্ছেদ - ২০২২ 


মূলভাব ঃ


ঝর্ণার গান' কবিতায় কবি ঝরনার গতিময়তা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকটি তুলে ধরেছেন। কবিতায় ঝরনার ছন্দময় শব্দে চঞ্চল ছুটে চলা মানবজীবনের গতিময়তা সৃষ্টির ইঙ্গিত বহন করে। ঝরনার রূপসৌন্দর্যে মানুষ পুলকিত হয়, মানসিক প্রশান্তি লাভ করে। ঝরনা ফুটে চলার পথে আপন ছন্দে বয়ে চলে সমস্ত নীরবতা ভেঙে। পাখির ডাকহীন নির্জন দুপুর, ভয়ংকর পাহাড়- সবকিছু উপেক্ষা করে ঝরনা স্তব্ধ পাথরের বুকে আনন্দের পদচিহ্ন রেখে বয়ে চলে। চমৎকার তার ধ্বনিমাধুর্য, বর্ণবৈচিত্র্য। ঝরনার সেই রূপসৌন্দর্য অতুলনীয়। গিরি থেকে পতিত এ জলরাশি পাথরের বুকে আঘাত করে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মনােহর এ সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। কবি ঝরনার জলধারার সৌন্দর্য অবলােকনে আমাদের মানসিক শান্তি ও কর্মস্পৃহা শানিত করার প্রয়াস পেয়েছেন।


কবিতার ব্যাখ্যা ঃ


>> চপল পায় কেবল ধাই,

কেবল গাই পরীর গান,

পুলক মাের সকল গায়, 

বিভােল মাের সকল প্রাণ। 

ঝরনা মনের আনন্দে পাহাড় থেকে নিচে নেমে আসে। তার বুকে খুশির জোয়ার। সে পরির গান গায় । স্বৰ্গারণ্যে আনন্দ গানে পরিদের মেতে ওঠার আনন্দ তার মনে। অসম্ভব খুশিতে ঝরনা আত্মভােলা হয়ে ইচ্ছেমতাে ছুটে বেড়ায় ।


>> শিথিল সব শিলার পর

চরণ থুই দোদুল মন,

দুপুর-ভাের ঝিঝির ডাক, 

ঝিমায় পথ, ঘুমায় বন।

পাহাড় থেকে পড়ার সময় সে পাথরের উপর পা রাখে। তারপর আপন ছন্দে বয়ে চলে। পাথরের ফাকে ফাকে গড়িয়ে চলে দূরের নদীর দিকে। যাওয়ার সময় সে পাথরের বুকে আনন্দের চিহ্ন রেখে যায়। ঝরনার আশপাশে কোনাে জনবসতি নেই। সব সময় সেখানে ঝিঝির ডাক শােনা যায়। পথ-ঘাট সব শান্ত থাকে, ঘুমন্ত বনের মধ্য দিয়ে ঝরনা বয়ে চলে।


>> বজন দেশ, কূজন নাই।

 নিজের পায় বাজাই তাল,

একলা গাই, একলা ধাই,

 দিবস রাত, সাঁঝ সকাল।

 জনশূন্য স্থানের মধ্য দিয়ে বয়ে চলার সময় ঝরনা আপন। ছন্দে এগিয়ে যায়। সেখানে পাখির কলকাকলি নেই। রাতদিন সে নির্জনতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায়।


>>  ঝুঁকিয়ে ঘাড় ঝুম-পাহাড়

ভয় দ্যাখায়, চোখ পাকায়;

 শঙ্কা নাই, সমান যাই,

টগর-ফুল-নূপুর পায়, 

কোন গিরির হিম ললাট 

 ঘামল মাের উভবে,

 কোন পরীর টুটুল হার 

কোন নাচের উৎসবে। 

নির্জন পাহাড় ঘাড় বাঁকিয়ে চোখ পাকিয়ে ঝরনাকে ভয় । দেখায়। কিন্তু সে সমস্ত ভয় উপেক্ষা করে ছুটে চলে। প্রকৃতির অনুপম সৌন্দর্য বিস্তার করতে করতে সে শঙ্কাহীনভাবে সমান তালে সামনে এগিয়ে যায়। চলার পথে ঝরনা তার সৃষ্টির রহস্য মনে রাখে না। কোন পাহাড়ের বরফ গলে তার সৃষ্টি সে তার খেয়াল না করেই আপন ছন্দে কেবল সামনে। ধেয়ে চলে।


 >> খেয়াল নাই নাই রে ভাই

পাই নি তার সংবাদই, 

ধাই লীলায়, খিলখিলাই _

বুলবুলির বােল সাধি। 

ঝরনা আত্মভােলার মতাে কেবল ছুটে চলে। নিজের ছন্দেই সে বিভাের, অন্য কোনাে সংবাদ তার কাছে নেই। সে নিজের লীলা-নৃত্য, ছন্দ নিয়েই ব্যস্ত। নিজেই সে হাসি-আনন্দে মত্ত । খুশিতে সে পাখির গান করে, বুলবুলির বােল সাধে। 


>> বন-ঝাউয়ের ঝােপগুলায়।

কালসারের দল চরে, 

শিং শিলায়-শিলার গায়,

ডালচিনির রং ধরে। 

বনে ঝাউগাছের ঝােপগুলাের পাশ দিয়ে চলার সময় চরে বেড়ানাে কালাে হরিণের দল দেখে। সেগুলােতে যেন ডালচিনির রং লেগে থাকে। সেগুলােকে দেখতে দেখতে ঝরনা এগিয়ে যায়।


>> ঝাপিয়ে যাই, লাফিয়ে ধাই,

দুলিয়ে যাই অচল-ঠাট,

 নাড়িয়ে যাই, বাড়িয়ে যাই _

 টিলার গায় ডালিম-ফাট। 

ঝরনা চলার পথে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে ছুটে চলে। তখন অচল, অসার বস্তুকেও সে জাগিয়ে তােলে, তাকে নাড়া দেয়। ঝরনা তার চলার আঘাতে টিলার গায়ে ডালিম-ফাটের চিহ্ন রেখে যায়। নিস্তব্ধ পাহাড়ে ঝরনাই একমাত্র চঞলা, মুখরা সত্তা।


>> শালিক শুক বুলায় মুখ ।

 থল-ঝঝির মখমলে,

 জরির জাল আংরাখায় 

অঙ্গ মাের ঝলমলে।

 ঝরনা চলার পথে অনতিদূরে স্বলে, জলজ গুল্মের মধ্যে শালিক-টিয়ের মুখ বুলিয়ে নিতে দেখে। সেই সৌন্দর্য ঝরনা আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। তার অঙ্গে জড়ানাে জরির কারুকাজ করা ঢিলাঢালা লম্বা পােশাক তাকে আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তােলে।


>> নিম্নে বাহ, শুনতে পাই 

ফটিক জল।' হাঁকছে কে,

কঠাতেই তৃষ্ণা যার 

নিক না সেই পাক ঘেঁকে। 

ঝরনা ক্রমাগত নিচের দিক ধেয়ে যায়। চাতক পাখির ডাক সে শােনে। যার তৃষ্ণা পেয়েছে সে পাক ঘেঁকে জল পান করতে চাইলে করুক। 


>> গরজ যার জল স্যাঁচার

 পাতকুয়ায় যাক না সেই,

সুন্দরের তৃষ্ণা যার।

 আমরা ধাই তার আশেই।

 জল সংগ্রহ করার আগ্রহ যার বেশি সে পাতকুয়ায় যাক। সেখান থেকে জল পান করে তৃষ্ণা দূর করুক। ঝরনার তাদের। দরকার নেই। যারা সৌন্দর্য উপভােগ করতে চায়, ঝরনা। তাদের আশায়ই ছুটে চলে


 >> তার খোঁজেই বিরাম নেই

 বিলাই তান— তরল শ্লোক,

চকোর চায় চন্দ্রমায়, 

আমরা চাই মুখ-চোখ।

 সৌন্দর্য পিপাসুদের খোঁজেই ঝরনা বিরামহীন ছুটে চলে। চলার পথে, মনােমুগ্ধকর ছন্দে সে তার ফটিকজলের তরলের গাথা শােনায়। চকোর পাখি যেমন তার সৌন্দর্য, প্রেমকে পরিপূর্ণতার জন্য চন্দ্রমা পেতে চায়, ঝরনাও তেমনি সৌন্দর্যমুগ্ধ চোখ চায়, যে চোখে ঝরনার প্রকৃত রূপ ধরা পড়ে অপরূপ হয়ে উঠবে।


 >>  চপল পায় কেবল ধাই।

উপল-ঘায় দিই ঝিলিক, 

দুল দোলাই মন ভােলাই,

ঝিলমিলাই দিগ্বিদিক। 

চঞ্চল পায়ে ঝরনা সৌন্দর্যপিপাসুদের মুগ্ধ করার জন্যই ছুটে চলে। সে সবার মন ভােলায়। জলের ধারায় স্থির প্রকৃতিকে মাতিয়ে তুলে দিগ্বিদিক সে ছুটে চলে।

Premium Blogger Templates