-->

জুতা আবিষ্কার কবিতা। Helped school

আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে জুতা আবিষ্কার কবিতার প্রত্যেকটি বিষয় তুলে  করব যাতে তোমাদের বুঝতে সুবিধা হয়। আমাদের ওয়েবসাইটে নবম - দশম শ্রেণীর সকল কবিতার  দেওয়া আছে। তোমরা চাইলে home গিয়ে সার্চ করে দেখতে পারো।


জুতা আবিষ্কার কবিতা। Helped school

আরও পড়ুন ঃ 

কপোতাক্ষ নদ কবিতা। 


জুতা - আবিষ্কার 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


কহিলা হবু, ‘শুন গাে গােবুরায়,

কালিকে আমি ভেবেছি সারা রাত্র –

মলিন ধুলা লাগিবে কেন পায়

ধরণী-মাঝে চরণ-ফেলা মাত্র!

তােমরা শুধু বেতন লহ বাঁটি,

রাজার কাজে কিছুই নাহি দৃষ্টি।

আমার মাটি লাগায় মােরে মাটি,

রাজ্যে মাের একি এ অনাসৃষ্টি!

শীঘ্র এর করিবে প্রতিকার,

নহিলে কারাে রক্ষা নাহি আর।


শুনিয়া গােবু ভাবিয়া হলাে খুন,

দারুণ ত্রাসে ঘর্ম বহে গাত্রে।

পণ্ডিতের হইল মুখ চুন,

পাত্রদের নিদ্রা নাহি রাত্রে।

রান্নাঘরে নাহিকো চড়ে হাঁড়ি,

কান্নাকাটি পড়িল বাড়ি-মধ্যে,

অশ্রুজলে ভাসায়ে পাকা দাড়ি

কহিলা গােবু হবুর পাদপদ্মে,

'যদি না ধুলা লাগিবে তব পায়ে,

পায়ের ধুলা পাইব কী উপায়ে! '



শুনিয়া রাজা ভাবিল দুলি দুলি,

কহিল শেষে, কথাটা বটে সত্য -

কিন্তু আগে বিদায় করাে ধূলি,

ভাবিয়াে পরে পদধুলির তত্ত্ব।

ধুলা-অভাবে না পেলে পদধুলা

তােমরা সবে মাহিনা খাও মিথ্যে,

কেন-বা তবে পুষিনু এতগুলা

উপাধি-ধরা বৈজ্ঞানিক ভৃত্যে?

আগের কাজ আগে তাে তুমি সারাে,

পরের কথা ভাবিয়াে পরে আরাে।


আঁধার দেখে রাজার কথা শুনি,

যতনভরে আনিল তবে মন্ত্রী


যেখানে যত আছিল জ্ঞানী গুণী

দেশে বিদেশে যতেক ছিল যন্ত্রী।

বসিল সবে চশমা চোখে আঁটি,

ফুরায়ে গেল উনিশ পিপে নস্য,

অনেক ভেবে কহিল, ‘গেলে মাটি

ধরায় তবে কোথায় হবে শস্য?'

কহিল রাজা, তাই যদি না হবে,

পণ্ডিতেরা রয়েছ কেন তবে?


সকলে মিলি যুক্তি করি শেষে

 কিনিল ঝটা সাড়ে-সতেরাে লক্ষ,

ঝাঁটের চোটে পথের ধুলা এসে

ভরিয়া দিল রাজার মুখ বক্ষ।

 ধুলায় কেহ মেলিতে নারে চোখ,

ধুলার মেঘে পড়িল ঢাকা সূর্য,

ধুলার বেগে কাশিয়া মরে লােক,

ধুলার মাঝে নগর হলাে উহ্য।

কহিল রাজা, করিতে ধুলা দূর,

জগৎ হলাে ধুলায় ভরপুর!


তখন বেগে ছুটিল ঝাঁকে-ঝাঁক

মশক কাঁখে একুশ লাখ ভিস্তি।

পুকুরে বিলে রহিল শুধু পাক, 

নদীর জলে নাহিকো চলে কিস্তি ।

জলের জীব মরিল জল বিনা,

ডাঙার প্রাণী সাতার করে চেষ্টা।

পাঁকের তলে মজিল বেচা-কিনা,

সর্দিজ্বরে উজাড় হলাে দেশটা। 

কহিল রাজা, এমনি সব গাধা

ধুলারে মারি করিয়া দিল কাদা!


আবার সবে ডাকিল পরামর্শে, 

বসিল পুনঃ যতেক গুণবন্ত –

ঘুরিয়া মাথা হেরিল চোখে সর্ষে,

 ধুলার হায় নাহিক পায় অন্ত ।

কহিল, “মহী মাদুর দিয়ে ঢাকো, 

ফরাস পাতি করিব ধুলা বন্ধ ।'

কহিল কেহ, রাজারে ঘরে রাখাে,

কোথাও যেন থাকে না কোনাে রন্ধ্র !


'ধুলার মাঝে না যদি দেন পা

তা হলে পায়ে ধুলা তাে লাগে না।'


কহিল রাজা, সে কথা বড়াে খাটি –

কিন্তু মাের হতেছে মনে সন্ধ,

মাটির ভয়ে রাজ্য হবে মাটি

দিবস-রাতি রহিলে আমি বন্ধ।

কহিল সবে, চামারে তবে ডাকি

চর্ম দিয়া মুড়িয়া দাও পৃথ্বী।

ধূলির মহী ঝুলির মাঝে ঢাকি।

মহীপতির রহিবে মহাকীর্তি।'

 কহিল সবে, হবে সে অবহেলে,

যােগ্যমতাে চামার যদি মেলে।'


রাজার চর ধাইল হেথা হােথা,

ছুটিল সবে ছাড়িয়া সব কর্ম।

যােগ্যমতাে চামার নাহি কোথা,

না মিলে এত উচিত-মতাে চর্ম।

 তখন ধীরে চামার-কুলপতি

কহিল এসে ঈষৎ হেসে বৃদ্ধ,

বলিতে পারি করিলে অনুমতি,

সহজে যাহে মানস হবে সিদ্ধ।

নিজের দুটি চরণ ঢাকো, তবে

 ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।'


 কহিল রাজা, ‘এত কি হবে সিধে!

ভাবিয়া ম'ল সকল দেশসুদ্ধ!'


মন্ত্রী কহে, “বেটারে শূল বিধে

কারার মাঝে করিয়া রাখাে রুদ্ধ।'

রাজার পদ চর্ম-আবরণে

 ঢাকিল বুড়া বসিয়া পদোপান্তে।

মন্ত্রী কহে, আমারাে ছিল মনে

কেমনে বেটা পেরেছে সেটা জানতে।'

সেদিন হতে চলিল জুতা পরা –

 বাঁচিল গােবু, রক্ষা পেল ধরা।


তথ্য সংগ্রহ ঃ পাঠ্যবই।

Premium Blogger Templates