-->

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা. Helped school.

 বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা. Helped school.

আরও পড়ুন ঃ 

স্বাধীনতা দিবস পুরো রচনা।


প্রবন্ধ-সংকেত ঃ


[ ১.ভূমিকা ॥

২.মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি ॥

৩.মুক্তিযুদ্ধের ডাক ॥

৪.মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ ॥

৫.মুক্তিযােদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও শরণার্থী শিবির ॥

৬.মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন ॥

৭.পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ॥

৮.মুক্তিযুদ্ধের খেতাব ॥

৯.উপসংহার ॥ ]


ভূমিকা :

বাঙালির জাতীয় জীবনে মহিমান্বিত এক অহংকার, গৌরবােজ্জ্বল এক বিজয়গাথার নাম বাংলাদেশের মুক্তিযুখ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের মানুষের আত্মত্যাগের অম্লান প্রতীক, দেশপ্রেমের এক জীবন্ত স্মারক । নয় মাসব্যাপী বীরত্বপূর্ণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।


মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি :

মধ্যযুগের প্রথম থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত প্রায় হাজার বছর ধরে ধনধান্য পুষ্পভরা সমৃদ্ধ বঙ্গের প্রতি তাকি, আফগান, পাঠান, মােগলরা। আকর্ষিত হয়েছে ও দীর্ঘকাল শাসন করেছে। এরপর আসে লােভী ইংরেজরা শাসনের নামে শােষণ ও লুণ্ঠনের জন্য। প্রায় দুশাে বছর ওপানবােশক শাসনের পর তদানীন্তন পূর্ববঙ্গকে পাকিস্তানের অধীন করে ইংরেজরা বিদায় নেয়। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকবর্গ শােষণ-বঞ্চনা ও নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রায় ২৪ বছর টিকে থাকে। এর মধ্যেই বাঙালি জাতি অন্যায় ও শােষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে, জাতীয়তাবােধের উন্মেষ ঘটিয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন তথা। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে নিজ মাতৃভাষার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, যা ছিল স্বাধীনতার বীজমন্ত্র ।

এরপর ১৯৫৪-এর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ১৯৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়লাভ মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নির্মাণ ও মজবুত করেছে। পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নির্লজ্জ বৈষম্য, সম্পদ পাচার, উন্নয়নে একমুখী। নীতি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ওপর জুলুম-নির্যাতন এদেশের মানুষকে স্বাধীনতার কথা ভাবতে উজ্জীবিত করে। এর ওপর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা ও আলােচনার নামে ষড়যন্ত্রকে এ দেশের মানুষ মেনে নিতে পারেনি। পাকিস্তানি চক্রান্ত বুঝতে পেরে । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযােগ আন্দোলনের ডাক দেন। উন্মাতাল মানুষ সেই ডাকে বিপুলভাবে সাড়া দেয়।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (সােহরাওয়ার্দী উদ্যান) লক্ষ লক্ষ মানুষের ঐতিহাসিক সমাবেশে এক উদ্দীপ্ত দিকনির্দেশনামূলক ভাষণে বঙ্গবন্ধু ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তােলার আহ্বান জানিয়ে ঘােষণা দেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। সমগ্র জাতির কণ্ঠে দৃপ্ত স্লোগান। ধ্বনিত হতে থাকে বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, 'বাংলাদেশ স্বাধীন কর'।


মুক্তিযুদ্ধের ডাক :

চক্রান্তকারী পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী একদিকে আলােচনার নামে প্রহসন, অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিপুল সংখ্যক সৈন্য। ও অস্ত্র এদেশে পাঠাতে থাকে। অসহযােগ আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে তদানীন্তন পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী ২৫ মার্চ মধ্য রাতে পূর্ববাংলার ঘুমন্ত নিরীহ মানুষের ওপর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে। তারা নির্মমভাবে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ধানমন্ডির বাসভবন থেকে। গ্রেফতার করে বাঙালির অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে অথাৎ ২৬ মাচের প্রথম প্রহরে ওয়্যারলেস। বার্তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন এবং বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত মুক্তিযুগ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এ দেশের আপামর মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ই.পি.আর, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ছুটি ভােগরত সােনক, অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক, সশস্ত্র পুলিশ, আনসার, ছাত্র-যুবকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিরােধ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।


মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ :

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মুজিবনগর (বৈদ্যনাথতলা) আমবাগানে জন্ম নেয় একটি নতুন রাষ্ট্র, বাংলাদেশ। গঠিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। নতুন সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম (রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে) মন্ত্রিসভার নাম ঘােষণা করেন। তারা হলেন- রাষ্ট্রপতি : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; উপ-রাষ্ট্রপতি : সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী : তাজউদ্দিন আহমদ; পররাষ্ট্র, সংসদ ও আইনমন্ত্রী : খন্দকার মুশতাক আহম্মদ; অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী : এম. মনসুর আলী; স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী : এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামান। কর্নেল এম.এ.জি. ওসমানীকে সেনাপ্রধান করে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশকে এগারােটি সেক্টরে ভাগ করা হয়।

 সেক্টর কমান্ডাররা হলেন :

সেক্টর-১ মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর রফিকুল ইসলাম, সেক্টর-২ মেজর খালেদ মােশাররফ, ক্যাপ্টেন এ.টি.এম. হায়দার, সেক্টর-৩ মেজর কে. এম. শফিউল্লাহ, মেজর নুরুজ্জামান, সেক্টর-৪ মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত, সেক্টর-৫ মেজর মীর শওকত আলী, সেক্টর-৬ উইং কমান্ডার এম.কে, বাশার, সেক্টর-৭ মেজর নাজমুল হক, মেজর কিউ. এম. জামান, সেক্টর-৮ মেজর আবু ওসমান চৌধুরী, মেজর এম.এ. মঞ্জুর, সেক্টর-৯ মেজর এম.এ. জলিল, সেক্টর-১০ কোনাে নির্দিষ্ট কমান্ডার ছিলেন না, সেক্টর-১১ মেজর আবু তাহের, স্কোয়াড্রন লিডার এম. হামিদুল্লাহ খান। এছাড়া কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে প্রায় ১৭ হাজার মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে গড়ে উঠেছিল 'কাদেরিয়া বাহিনী'।


মুক্তিযােদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও শরণার্থী শিবির :

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণে এক কোটি। মাগুণ ভারতে আশ্রয় নেয়। তাদের ঠাই হয় শরণার্থী শিবিরে। সেখান থেকে আগ্রহী ও উপযুক্ত লােকদের বাছাই করে তাদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেক্টর কমান্ডারদের অধীনে তারা গেরিলা ও সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পর্যুদস্ত ও হীনবল করে ফেলে। আম ও শহরের মানুষ। মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসাসেবাসহ নানাভাবে সাহায্য-সহযােগিতা করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।


মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন :

ভারত ও সােভিয়েত রাশিয়ার জনগণ ও সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সরাসরি সমর্থন করে। এছাড়া যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র। ফ্রান্স, জামানি, ইতালি প্রভৃতি দেশের অসংখ্য বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিল্পী-সাহিত্যিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করে নানাভাবে অকুণ্ঠ। সাহায্য-সহযােগিতা করেন। ফলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নাজুক অবস্থায় পড়ে মনােবল হারিয়ে ফেলে।


পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় :

মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে ভীত-সন্ত্রস্ত হানাদার বাহিনী গ্রামাঞ্চল ছেড়ে শহরে। পালাতে থাকে। ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করে বিমান হামলা চালায়। এ সময় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী চারদিক থেকে যৌথ । অভিযান শুরু করে এগুতে থাকে ঢাকার দিকে। যৌথবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণ ও বােমাবর্ষণের মুখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা ১ মিনিটে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হানাদার বাহিনী বিনা শর্তে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। জেনারেল নিয়াজী তার নিজ পােশাক থেকে সামরিক ব্যাজগুলাে খুলে অবনত মস্তকে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ জাতীয় পতাকা উন্নত শিরে তার বিজয় গৌরব ঘোষণা করে।  


মুক্তিযুদ্ধের খেতাব :

মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ মানুষের জীবনদান, আড়াই লাখ নারীর সম্ভম ও কোটি কোটি টাকার সম্পদের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে । বাংলাদেশ। যারা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে দেশের স্বাধীনতার জন্য অকুতােভয় সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করতে করতে জীবনদান করেছেন, তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের প্রতি সম্মানস্বরূপ দেওয়া হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম’ ও ‘বীরপ্রতীক' খেতাব । বীর শহিদদের মধ্যে। সাতজন পেয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব, এরা হলেন- সিপাহি মােহাম্মদ মােস্তফা কামাল, ন্যান্সনায়েক মুন্সী আবদুল রউফ, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট । মতিউর রহমান, ল্যান্সনায়েক নূর মােহাম্মদ, সিপাহি হামিদুর রহমান, স্কোয়াড্রন ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন ও ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। আমাদের সামনে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে তাদের মৃত্যুঞ্জয় স্মৃতি।


উপসংহার :

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আনন্দ-বেদনার এক স্বর্ণালি অধ্যায়। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশই ছিল মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ। এই আদর্শকে সমুন্নত রেখে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা ও সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। যাতে মুক্তিযুদ্ধের বিরােধিতাকারী, দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধ্বংসকারাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে পারে । মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ। হয়ে সুখী, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তােলাই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

Premium Blogger Templates