-->

স্বাধীনতা দিবস রচনা. Helped school.

  স্বাধীনতা দিবস রচনা 


স্বাধীনতা দিবস রচনা. Helped school

আরও পড়ুন ঃ 

বাংলা নববর্ষ রচনা। 


এই প্রবন্ধ থেকে যা আমরা শিখতে পারবো ঃ

[ ১. ভূমিকা।।

২. বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ।।

৩. অনন্য ঘটনা।।

৪. সংগ্রামের ইতিহাস।।

৫. স্বাধীনতা দিবস উদ্ যাপন।।

৬. স্বাধীনতার চেতনা ও তাৎপর্য।।

৭. পরিস্থিতি উত্তরণের উপায়।।

৮. উপসংহার।। ]


ভূমিকা :

স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। অনাহারী একজন গৃহহীন পথের লােকও ব্যক্তিগত জীবনে স্বাধীনতা কামনা। করে। স্বাধীনতা অর্থ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে সার্বভৌম আত্মমর্যাদা নিয়ে দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রা। কিন্তু নির্মম হলেও সত্য যে, স্বাধীনতা সহজে পাওয়া যায় না। এটি কারাের ভিক্ষা বা দয়ার দান নয়। স্বাধীনতার জন্য ইতিহাস বার বার। রক্ত কলঙ্কিত হয়েছে। তাই স্বাধীনতা প্রত্যেক জাতির অমূল্য সম্পদ। যে জাতি যেদিন স্বাধীনতা লাভ করে সেদিনটি জাতীয় জীবনে এক গৌরব, আনন্দ ও তাৎপর্যময় দিন। 


বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস :

২৬ মার্চ, ১৯৭১ এ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি দেশের অন্তর্ভুক্তি ঘটে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস এ দিনটিকে ঘিরে রচিত হয়েছে। এ দিনে নবীন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এ স্বাধীনতা দিবসের আনন্দোজ্জ্বল মুহূর্তের মধ্যে প্রথমেই যে কথা মনে পড়ে, তা হলাে এ দেশের অসংখ্য দেশপ্রেমিক শহিদদের আত্মদান । ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার মানুষ পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক স্বৈরশাসনের ২৪ বছরের গ্লানি থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছিল । লাখ লাখ শহিদের রক্তে রাঙানাে আমাদের স্বাধীনতার সূর্য। তাই দেশের জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবস সবচাইতে গৌরবময় ও পবিত্রতম দিন। তাই ২৬ মার্চ, আমাদের তথা বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস।


অনন্য ঘটনা :

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম বিশ্বের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসে একটি আদর্শ-উজ্জ্বল দিক। কোনাে জাতিকেই জন্মভূমির জন্য এমনভাবে আত্মত্যাগ করতে হয় নি । লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়ে, অর্থ দিয়ে, সম্পদ দিয়ে, সন্ত্রম। বিলিয়ে দিয়ে স্বাধীনতার পতাকা এ দেশের শ্যামল ভূমিতে ওড়াতে সক্ষম হয়েছিল । এজন্যে এ দেশের মানুষকে সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় সংগ্রাম করতে হয়েছে এক শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে। অবশেষে তারা সেই অকুতােভয় সংগ্রামে জয়ী হয়েছে। ফলে আমরা লাভ করেছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ- বাংলাদেশ ।


সংগ্রামের ইতিহাস :

একসময় পুরাে ভারতবর্ষ শাসন করত ব্রিটিশ তথা ইংরেজরা ! ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশশাসনের অবসান ঘটে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ছিল দুটি অংশ । একদিকে পূর্ব পাকিস্তান অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তান। স্বাধীনতার পরপই পাকিস্তানের কুচক্রী শাসকগােষ্ঠী নানাভাবে পূর্ব বাংলাকে শাসন ও শােষণ করার যড়যন্ত্র শুরু করে। রাজনীতি, চাকরি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, অর্থ-সম্পদ, বিলি-বাটোয়ারা সব ক্ষেত্রেই তারা পূর্ব বাংলাকে ঠকাতে শুরু করে। এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন হয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে শহিদ হন সালাম, রফিক, জাব্বার বরকতসহ আরও অনেকে। এরপরই শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন। 


১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী এদেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা শুরু করে । শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম । দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর আর কোনাে উপায় খুঁজে না পেয়ে হানাদার পাকবাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করে । ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৫ টা ১ মিনিটে ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে যৌথ কমাণ্ডের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরােরা এবং পাকিস্তানের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন। ১৯৭১-এ ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। তাই ১৬ ডিসেম্বরকে আমরা পালন করি বিজয় দিবস হিসেবে।


স্বাধীনতা দিবস উদ্ যাপন :

প্রতিবছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের জন্য আমরা ভােরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদদের প্রত্ম শ্রদ্ধা নিবেদন করি। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এ দেশের সর্বস্তরের জনগণ নানা অনুষ্ঠা আয়ােজনের মধ্য দিয় শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। এ দিবস উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে আলােচনা সভা কুচকাওয়াজ, শােভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। তাছাড়া মসজিদ-মন্দির-গির্জায় জাতির অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। এই দিনের অনুষ্ঠানমালা আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে শাণিত ও উজ্জীবিত করে।


স্বাধীনতার চেতনা ও তাৎপর্য :

আমাদের জাতীয় জীবনে এ দিনটির প্রধান তাৎপর্য হচ্ছে- এ দিনটি সমগ্র দেশবাসীর বহুকাল। লালিত মুক্তি ও সংগ্রামের অঙ্গীকারে ভাস্বর । এ দিন আমাদের আত্মপরিচয়ের গৌরবে উজ্জ্বল, ত্যাগে ও বেদনায় মহীয়ান । প্রতিবছর গৌরবময় এ দিনটি পালন করতে গিয়ে আমাদের কর্তব্য হয়ে ওঠে স্বাধীনতার স্বপ্ন ও স্বাধ্য আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, জাতীয় জীবনে আমাদের অর্জন কতটুকু আর বিশ্বসভায় আমাদের অবস্থান কোথায় সেসব মিলিয়ে দেখা ।। এদিক থেকে এ দিনটি আমাদের আত্মসমালােচনার দিন, হিসেব মেলাবার দিন, আত্মজিজ্ঞাসার দিন। আমাদের এ কথাটি ভুলে গেলে চলবে না যে, সমগ্র দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষা ও আত্মত্যাগের ফলেই এই স্বাধীনতা লাভ সম্ভব হয়েছিল।


আমাদের এই স্বাধীনতা দারিদ্র্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ । এ আদর্শগুলাের প্রকৃত রূপায়ণই আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। স্বাধীনতা অর্জনের ৩৭ বছর পর এখনাে অসংখ্য লােক অশিক্ষা ও দারিদ্র্য কবলিত অবস্থায় রয়েছে। জনগণের জীবনের কথায় এখনাে আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে সটিকভাবে অর্থবহ করে তুলতে পারিনি । লাখ লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি । আজ আমাদের দায়িত্ব, এক সমুদ্র রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে সুখী-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করা ।


পরিস্থিতি উত্তরণের উপায় :

অজস্র রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যাতে কারাে ব্যক্তিগত বা দলগত চোরাবালিতে পথ না । হারায় সেই প্রচেষ্টা আমাদের গ্রহণ করতে হবে। আমাদের এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, স্বাধীনতা অর্জন করা কঠিন। স্বাধীনতা রক্ষা করা আরও কঠিন । আজ বিশ্বের দিকে দিকে উৎকর্ষ সাধনের প্রতিযােগিতা। এক্ষেত্রে আমাদেরও সৃষ্টি করতে। হবে উন্নয়নের ধারা। দেশ গড়ার কাজে আজ প্রয়ােজন সমগ্র জাতির নতুন করে শপথ গ্রহণ। সর্বপ্রকার স্বৈরতন্ত্র থেকে দেশকে। মুক্ত করে আত্মশক্তিকে বলীয়ান হয়ে উঠতে হবে। তবেই গড়ে উঠবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।


উপসংহার :

আমাদের জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা যেমন তাৎপর্য বহন করে, তেমনি লক্ষ লক্ষ ক্লিষ্ট ও আর্তমানুষ যাতে জাতীয়। পতাকাকে সমুন্নত রেখে নতুন জীবনকে পাথেয় করে নিজেদের গড়ার শপথ নিতে পারে সেদিকে আমাদের লক্ষ রাখা বাঞ্ছনীয়।


স্বাধীনতা দিবস রচনাটিতে  নতুন কিছু সংযোজন করা যায় বা বাদ দেওয়া প্রয়োজন কি/না ?  সেটা আমাদের  কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Premium Blogger Templates